বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন: নতুন জোটের সম্ভাবনা?

একসময়কার রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি ও জামায়াত বর্তমানে ভিন্নমুখী অবস্থানে রয়েছে। ২০০১ সালে একসঙ্গে সরকার গঠন করা এ দুটি দল দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে একই মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেও সাম্প্রতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। অন্যদিকে, জুলাই বিপ্লবের কেন্দ্র থেকে উঠে আসা ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক শক্তির আবির্ভাব ঘটছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে।

আগামী নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন দল কোন জোটের দিকে ঝুঁকবে, তা নিয়ে আলোচনা তীব্র হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনটি বড় রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপি সম্ভাবনাময় দলগুলোকে নিয়ে কিছু আসন ভাগাভাগির ভিত্তিতে নির্বাচন করতে পারে। অন্যদিকে, জামায়াত ইসলামী দলগুলোকে একত্রিত করে একটি ইসলামপন্থী জোট গঠনের চেষ্টা করছে।

বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলেও তারা আলাদাভাবে রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে। বিএনপি এখনো চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করেনি, তারা এককভাবে নির্বাচন করবে নাকি জোটবদ্ধ হবে। অন্যদিকে, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলগুলো আপাতত বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বরং তারা একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক বলয় তৈরি করতে চাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একটি কার্যকর সংসদ গঠনের জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। তাই বিএনপির সঙ্গে না গিয়ে কিছু দল স্বাধীনভাবে বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারে। তবে আসন ভাগাভাগি ও নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ৩০০ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে একটি পৃথক জোট গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, এবারের নির্বাচনে কিংবা ভবিষ্যতে জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তারা একে অপরের সঙ্গী হচ্ছে না।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই পরিবর্তন আগামী নির্বাচনে কী ধরনের সমীকরণ তৈরি করবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে বিভিন্ন দলের অবস্থান ও কৌশল পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়, রাজনৈতিক পুনর্গঠনের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

Leave a comment